প্রাকৃতিক মসলা দারুচিনির রয়েছে অসাধারণ কিছু গুণাগুণ। শুধু খাবারের স্বাদ ও ঘ্রাণ বাড়াতেই নয়, চিকিৎসাবিজ্ঞানের গবেষণাতেও বারবার প্রমাণিত হয়েছে এর স্বাস্থ্য উপকারিতা। সম্প্রতি এক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, নিয়মিত দারুচিনি খেলে ব্লক হয়ে যাওয়া ধমনি পরিষ্কার হতে পারে এবং হৃদরোগের ঝুঁকিও কমে।
গবেষণার বিস্তারিত যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া’র একদল গবেষক একটি ক্লিনিক্যাল স্টাডিতে দেখতে পান—দারুচিনিতে থাকা ‘সিনামালডিহাইড’ (Cinnamaldehyde) নামক যৌগ রক্তনালির প্রদাহ কমাতে সহায়ক। এটি ধমনিতে জমে থাকা ফ্যাট ও কোলেস্টেরল স্তর ভেঙে ফেলতেও ভূমিকা রাখতে পারে। গবেষণায় অংশ নেওয়া যাদের হালকা থেকে মাঝারি মাত্রার আর্টারিওস্ক্লেরোসিস (ধমনিতে ব্লক) ছিল, তাদের এক মাস প্রতিদিন নির্দিষ্ট মাত্রায় দারুচিনি গ্রহণ করানো হয়।
ফলাফল বলছে, দারুচিনি গ্রহণকারীদের রক্তনালির স্বাস্থ্য তুলনামূলকভাবে উন্নত হয়েছে এবং রক্তপ্রবাহ আরও স্বাভাবিক হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
বাংলাদেশের খ্যাতনামা হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘দারুচিনিতে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান। এটি ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং কোলেস্টেরলের মাত্রাও কমায়। তবে এটি কখনোই মূল চিকিৎসার বিকল্প নয়, বরং একটি সহায়ক উপায় হিসেবে বিবেচনা করা যায়।’
কীভাবে খাবেন দারুচিনি?
পুষ্টিবিদরা বলছেন, প্রতিদিন সকালে এক কাপ গরম পানিতে আধা চা চামচ গুঁড়ো দারুচিনি মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। চাইলে এতে মধুও যোগ করা যেতে পারে। তবে অতিরিক্ত দারুচিনি গ্রহণ শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, বিশেষ করে যাদের লিভার বা কিডনির সমস্যা রয়েছে।
সতর্কতা ও পরামর্শ
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউট্রিশনিস্ট ফারজানা ইসলাম বলেন, ‘যেকোনো প্রাকৃতিক উপাদান গ্রহণের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। বিশেষ করে যাদের উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা ওষুধ খাওয়ার রুটিন রয়েছে।’
দারুচিনি আমাদের রান্নাঘরের অতি পরিচিত উপাদান হলেও, এর স্বাস্থ্য উপকারিতা নতুনভাবে ভাবনার সুযোগ করে দিচ্ছে। গবেষণা প্রমাণ করেছে, এটি শুধুই মসলা নয়, বরং হৃদযন্ত্রের সুস্থতায়ও রাখতে পারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা—যদিও কোনোভাবেই এটি চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিজে থেকেই ওষুধের বিকল্প হিসেবে গ্রহণ করা উচিত নয়।
