ফের ফিরে এসেছে ‘ব্লাড মুন’। অর্থাৎ, চাঁদ রূপ পরিবর্তন করে লাল হবে। রক্তিম আভা রাতের আকাশজুড়ে ছড়িয়ে থাকে চাঁদ। রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) দুর্লভ এই চন্দ্রগ্রহণ বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ দেখার সুযোগ পাবেন।
এদিন প্রায় ৮২ মিনিট চলবে চন্দ্রগ্রহণ। যা সাম্প্রতিক সময়ের দীর্ঘতম গ্রহণ বলে জানিয়েছে মহাকাশবিষয়ক ওয়েবসাইট স্পেস ডটকম। এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে এই গ্রহণ দেখা যাবে। এবারের চন্দ্রগ্রহণ বিশ্বের প্রায় ৮৫ শতাংশ মানুষই দেখতে পারবেন।
এ চন্দ্রগ্রহণ বাংলাদেশ থেকেও দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশের আকাশে চন্দ্রগ্রহণ রোববার রাত ৯টা ২৮ মিনিটে শুরু হয়েছে চন্দ্রগ্রহণ। এ সময় চাঁদ ধীরে ধীরে পৃথিবীর ছায়ায় প্রবেশ করতে থাকবে। চাঁদের পুরোপুরি লালচে রূপ, অর্থাৎ ‘ব্লাড মুন’ দেখা যাবে রাত সাড়ে ১১টা থেকে সোমবার ১২টা ৫২ মিনিট পর্যন্ত। এরপর, রাত ২টা ৫৫ মিনিটে চাঁদ পুরোপুরি পৃথিবীর ছায়া থেকে বেরিয়ে আসবে, শেষ হবে গ্রহণের এই মহাজাগতিক দৃশ্য।
এদিকে চন্দ্রগ্রহণ নিয়ে ক্যালেন্ডার কিংবা ডায়েরিতে বিশেষভাবে নজর দিতে দেখা যায় অন্তঃসত্ত্বা নারীদের। কেননা, ওইদিন নাকি তাদের অনেক কিছুই নিষেধ। সমাজে চারপাশে কিছুটা চোখ মেলে তাকালে এমন অনেক ভ্রান্ত ধারণা দেখতে পাওয়া যায়। সমাজে প্রচলিত রয়েছে যে, সূর্য বা চন্দ্রগ্রহণের সময় অন্তঃসত্ত্বা নারীদের খাবার খাওয়া নিষেধ। এ সময় মাছ, তরকারি বা এ জাতীয় কিছু কাটাকাটিও করতে পারবে না। তাতে নাকি গর্ভের সন্তান বিকলাঙ্গ বা অন্য কোনো ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। এসব ধারণা কেবলই কুসংস্কার। যা ইসলামি শরিয়াহ অনুযায়ী বিশ্বাস করার কোনো ভিত্তি নেই।
পবিত্র ইসলাম ধর্ম আবির্ভাবের আগে জাহেলি যুগের মানুষের বিশ্বাস ছিল―পৃথিবীর বড় ধরনের কোনো পরিবর্তনের জন্য চাঁদ এবং সূর্যের গ্রহণ লাগে। যেমন বড় কারও জন্ম, মৃত্যু বা দুর্ভিক্ষের আগমন ইত্যাদির জন্য প্রকৃতিতে এমনটা হয়ে থাকে।
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাদের এ ভুল বিশ্বাস খন্ডন করে বলেন, ‘সূর্য বা চন্দ্রগ্রহণ কারও জন্ম-মৃত্যুর কারণে হয় না, এসব মহান আল্লাহর নিদর্শনাবলির দুটি নির্দেশ মাত্র। তোমরা যখন তা (সূর্য বা চন্দ্রগ্রহণ) দেখবে, তখন নামাজে নিমগ্ন হবে।’ (বুখারি শরিফ, হাদিস: ১০৪২, মুসলিম শরিফ, হাদিস: ৯১৪।-হাদিস দু‘টির ব্যাখ্যা লক্ষণীয়)
এছাড়া সূর্য বা চন্দ্রগ্রহণের সময় ঠিক কী করা উচিত, হাদিসে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেয়া আছে। মহানবী (সা.)-এর জীবদ্দশায় সূর্যগ্রহণ হয় একবার। তখন তিনি লম্বা কেরাত ও লম্বা রুকু-সিজদার মাধ্যমে নামাজ আদায় করেন। অতঃপর বলেন, ‘সূর্য ও চন্দ্র মহান আল্লাহর নির্দশনাবলির দুটি নির্দশন মাত্র। কারও মৃত্যু বা জন্মের জন্য কখনো সূর্য বা চন্দ্রগ্রহণ হয় না। আর যখন তোমরা তা দেখবে তখন বেশি বেশি আল্লাহকে স্মরণ করবে (দোয়া করবে), বেশি বেশি তাকবির (আল্লাহু আকবার) বলবে, নামাজ আদায় করবে এবং সদকা করবে।’ (বুখারি শরিফ, হাদিস: ১০৪৪)